মো: আকতার হোছাইন কুতুবী ॥

*ডিবির সাত সদস্যকে আটক করে সেনাবাহিনী ঠিক কাজই করেছে-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
* কক্সবাজারের সেনাবাহিনীর হাতে আটক ৭ ডিবি পুলিশ কারাগারে
* মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার
* প্রশংসিত মেজর নাজিম
* অপহৃত গফুরও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী
* তৎকালীন ওসি মঞ্জুরুল আলম যোগদানের পর থেকেই শুরু হয় ডিবি পুলিশের ইয়াবা বাণিজ্য ও গ্রেফতার !
* ডিবি’র পরিদর্শক ইয়াসির আরাফাত দায় এড়াতে পারেন কি?

জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পষ্ট ঘোষণা ইয়াবা নামক মরণ নেশাকে এদেশ থেকে স্বমূলে বিনাশ করতে হবে। কক্সবাজারের এক জনসভায় তিনি এ বিষয়ে সরাসরি জনগণের কাছে জানান দিয়েছিলেন ইয়াবা ব্যবসায় যারা জড়িত হবেন, সে যেই হোক না কেন তার কোন রক্ষা নাই। পুলিশ প্রধান একেএম শহিদুল হক নিজেও বিভিন্ন সভা সেমিনারে ইয়াবার বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখেন। অথচ ইয়াবা বাণিজ্যে পুলিশের কতিপয় সদস্য জড়িত থাকার সংবাদ বারবার শিরোণাম হচ্ছে। স্বভাবতই জনমনে প্রশ্ন ওঠেছে, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পুলিশ প্রধানের বাধা কোথায়? একই সঙ্গে “ইয়াবা গডফাদার ও জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জরুরি বলে সচেতন মহল মনে করে।
সম্প্রতি কক্সবাজারে সেনাবাহিনী কর্তৃক ডিবি পুলিশের ৭ সদস্যকে মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকাসহ আটকের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় চলছে। ঘটনার পর পরই পুলিশ সুপার কর্তৃক অভিযুক্তদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। ২৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) দুপুরে আদালত আটককৃতদের কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন। এর আগের দিন (বুধবার) রাতে অভিযুক্ত ডিবির সাত সদস্যে’র বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা করেন অপহৃত ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর। মামলা নং-৩৮/১৭। মামলা’র বাদী আব্দুল গফুরের ভাই কাউন্সিল’র মো. মনিরুজ্জামান জানান, আমরা টেকনাফ থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেছি বুধবার। তবে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন কি হচ্ছে না হচ্ছে আমি জানিনা। কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর হাতে মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকাসহ ডিবি পুলিশের ৭ সদস্যকে আটকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার বিকালে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের যেকোনও নাগরিক একজন ক্রিমিনালকে আটক করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আটকের পর ক্রিমিনালকে পুলিশে সোপর্দ করাই মূল কাজ। সেনাবাহিনী সেই কাজটিই করেছে। মুক্তিপণের টাকাসহ ডিবির সাত সদস্যকে আটক করে সেনাবাহিনী ঠিক কাজই করেছে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের কাছে জাতীয় দৈনিক আমার কাগজ, দি গুড মর্নিং এর সহ সম্পাদক, জাতীয় ম্যাগাজিন জনতার কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক, জাতীয় ম্যাগাজিন জাতির আলো’র উপদেষ্টা সম্পাদক মো: আকতার হোছাইন কুতুবী জানতে চান এ ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে কিনা? জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘অপরাধ করে অপরাধীরা পার পেয়ে গেলে বা অপরাধীর বিচার করা না হলে বাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণœ হতো।’ কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, তা প্রমাণিত হয়েছে।’ তাদেরকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড, অপহৃতের এজাহার পাওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এটাই তার বড় প্রমাণ।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অভিযোগ তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষপাত দুষ্ট হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ, অভিযোগ উঠলে তা পুনরায় তদন্ত করার জন্য একাধিক কর্তাব্যক্তি রয়েছেন। ঘটনার আসল ক্লু প্রকাশের জন্য প্রয়োজন হলে এমপিরা রয়েছেন। সংসদীয় কমিটিও যেকোনও অভিযোগ তদন্ত করার এখতিয়ার রাখে।’ তিনি আরো বলেন, ‘অপেক্ষা করুন, দেখুন, সঠিক বিচার হয় কিনা।’
এদিকে মিডিয়া ও ফেসবুকে প্রশংসায় ভাসছেন ৭ ডিবি আটকের নায়ক মেজর নাজিম। ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর আদায় করা মুক্তিপণের টাকাসহ ডিবি পুলিশের সাত সদস্যকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। এই খবর ছিলো বুধবার টক অব দ্যা কান্ট্রি। টেকনাফের সাবরাং ত্রাণকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মেজর নাজিম আহমেদের নেতৃত্বে ডিবির ওই দলটিকে আটক করা হয়। এমন কৃতিত্ব দেখানোয় প্রসংশার জোয়ারে ভাসছেন মেজর নাজিম আহমেদ। পুরো ফেসবুক জুড়ে এখন তার ছবির ছড়াছড়ি। মেজর নাজিমের প্রশংসা করে রাশেদ খান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন- “বিগত কয়েক বছর ধরে জাতীয় বীর বলতে আমরা বুঝি “ক্রিকেট খেলোয়াড়”, তাই ক্রিকেট দলের কোন খেলোয়াড় যদি ভালো খেলে, তখন সেই প্লেয়ার হয়ে যায় জাতীয় বীর। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সেই প্লেয়ার’কে নিয়ে শুরু হয় উন্মাদনা। অনেকদিন ধরে একজন সাচ্চা জাতীয় বীর খুঁজছিলো এই দেশের মানুষ। যিনি সাহস করে সমাজের চরম বিশৃঙ্খলা কে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবেন। যিনি সমাজের অচল অবস্থা কে চোখ রাঙানি দেবেন। আজকে দেশে চা দোকানদার থেকে শুরু করে কর্পোরেট অফিসের উঁচু তলার বড় কর্তা পর্যন্ত গর্বের সাথে বলছে: ‘আমাদের দেশে একজন মেজর নাজিম আহমেদ আছেন। যিনি দেয়াল চিত্রের সেই সুবোধের প্রতিচ্ছবি, যিনি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলতে পারেন। সুবোধ পালিয়ে যায়-নি, সুবোধ ফিরে এসেছে।” আল আমিন নামে একজন লিখেছেন- একজন মেজর নাজিম আহম্মেদের অভাবে প্রশাসনের এরকম হাজার হাজার ক্রাইম ধামাচাপা পড়ে যায়।” বদরুদ্দিন শিশির নামে একজন লিখেছেন- “যদি ৬৪ জেলায় একরাতের জন্য সেনা টহল বসানো হতো, তাইলে কত্ত ইলিশ যে ধরা পড়তো!” জেরিন খান নামে একজন লিখেছেন- “জাতির গর্বিত সৈনিক “মেজর নাজিম” স্যার এর সর্বক্ষণ খোঁজ-খবর রাখা তাঁর পরিবার এবং জাতির দায়িত্ব। যেকোন সময় সরকার ক্যান্সারের রোগী বানিয়ে দিয়ে বিদেশে সাপ্লাই দিতে পারে। “মেজর নাজিম” স্যারদের মত সেনাবাহিনী আছে বলেই জাতি আজও আশা হারায়নি। স্যালুট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।”
উল্লেখ্য, বুধবার ভোর ৪টার দিকে ডিবির এসব সদস্যকে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শাপলাপুর এলাকা থেকে আটক করেন সেনা সদস্যরা। ডিবির দলটিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মেজর নাজিম আহমেদ বলেন, আবদুল গফুরকে মঙ্গলবার সকালে অপহরণ করে ডিবির একটি দল। এরপর মুক্তিপণ হিসেবে পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে তারা। কিন্তু দর-কষাকষির পর ওই ব্যবসায়ীর পরিবার ১৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। টাকা পাওয়ার পর তাঁকে ভোররাতে কক্সবাজারের টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
এরপর ওই ব্যবসায়ীর পরিবার বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানালে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ এলাকার লম্বরী সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে ডিবির গাড়িটি সংকেত দিয়ে থামানো হয়। এ সময় মনিরুজ্জামান নামের একজন উপপরিদর্শক (এসআই) পালিয়ে যান। বাকী ছয়জনকে আটক করা হয়। গাড়ি থেকে মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে ভোররাতেই তাঁদের সাবরাং সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়।
মেজর নাজিম আহমেদ বলেন, ‘জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সেনাবাহিনী ক্যাম্পে এসে আলোচনার মাধ্যমে আটককৃতদের নিয়ে যান। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমাদের জানান তাঁরা। তবে উদ্ধার করা টাকা আমাদের হাতেই রয়েছে।’
জানা যায়, গফুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। টেকনাফ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের জালিয়া পাড়ার মৃত আবদুল গফুরের ছেলে মো. গফুর আলম। শুধু গফুরই নন, তার পুরো পরিবারই দেশের ইয়াবা সরবরাহের অন্যতম বড় সিন্ডিকেট। তার অন্য ৪ ভাইয়ের মধ্যে মিয়া হোসেন, মনিরুজ্জমান লেডু, মো. জাফর ওরফে টি টি জাফর ও নুরুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তারা সবাই মায়ানমার থেকে জামাল কোম্পানি নামের এক ইয়াবা কারখানার মালিকের ডিলার হিসেবে বাংলাদেশে বিপণনের দায়িত্ব পালন করেন।
গফুরের ৫ ভাইয়েরই রয়েছে শত কোটি টাকার সম্পদ। অথচ বছর চারেক আগেও টেকনাফ উপরের বাজার এলাকায় মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে স্যান্ডেল ও জুতা বিক্রি করে চলতেন তারা। কয়েক বছরের ব্যবধানে ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসা করে তারা হয়ে উঠেছেন অবৈধ কোটি কোটি টাকার মালিক। গফুরের বড় ভাই জাফর আলম ওরফে টি টি জাফর হলেন বাংলাদেশের অন্যতম হুন্ডি ব্যবসায়ী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ১০ জন অর্থপাচারকারী ও হুন্ডি ব্যবসায়ীর তালিকার শীর্ষে রয়েছে এই জাফরের নাম। ব্যাংকের টাকা টিটি করার মতো জাফরকে টাকা দিলে মিয়ানমারে পাওয়া যায়, তাই সে টি টি জাফর নামে পরিচিত।
টেকনাফ দিয়ে ইয়াবা, স্বর্ণ চোরাচালান ও মানব পাচারের যতো টাকা অবৈধ লেনদেন হয় তার সিংহভাগ হয় এই টি টি জাফরের মাধ্যমে। ২০১৪-২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের সব অবৈধ লেনদেন হয় এই জাফরের মাধ্যমেই।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা আসা ও ইয়াবার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে জাফরের মাধ্যমেই বেশি টাকা পাচার হয়।
এদিকে, ডিবি পুলিশের ইয়াবা ব্যবসা, গ্রেফতার বাণিজ্যসহ অনেক জঘন্যতম অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত হওয়া নতুন কোন বিষয় নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অনুসন্ধানেও এ ব্যাপারে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, সাবেক ওসি মঞ্জুরুল আলম যখন কক্সবাজারে গোয়েন্দা শাখার ইনচার্জ ছিলেন তখন থেকেই শুরু হয় ডিবি পুলিশের ইয়াবা ব্যবসা ও গ্রেফতার বাণিজ্য। ওসি মঞ্জুরের খুব কাছের হিসেবে পরিচিত এসআই বেলাল নিয়ন্ত্রণ করতেন ডিবির অন্ধকার জগতের অবৈধ কর্মকা-। তাদের সিন্ডিকেটের ইয়াবা বাণিজ্যকে নির্বিঘœ করার জন্য শহরের সার্কিট হাউস রোডের আমির আলী ম্যানশনে নেয়া হয় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। অভিযোগ ছিল, ডিবি পুলিশের হর্তাকর্তারা ইয়াবা জব্দ করে আসামীসহ সোজা নিয়ে যাওয়া হতো ওই ফ্ল্যাটে। তারপর শুরু হতো দফারফা! ইয়াবাগুলো ডিবি কার্যালয়ে না এনে ওই ফ্ল্যাট থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করতেন ডিবি পুলিশের মূল হোতারা। আর যাদেরকে গ্রেফতার করা হতো তাদেরকে বড় অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দিতো। আর যারা তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে পারতো না তাদেরকে অল্প সংখ্যক ইয়াবা দিয়ে চালান দেয়া হতো। ফলে ওই সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছিলো কোটি কোটি টাকা। সে সময় ডিবি পুলিশ ছিলো বেপরোয়া, সাধারণ মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। ওই সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী সদস্য এএসআই মাহফুজ ৭ লাখ ইয়াবা নিয়ে ফেনীতে গ্রেফতার হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। এ সময় মাহফুজের সাথে তৎকালীন ডিবির এসআই বেলাল ও হাইওয়ে পুলিশের তৎকালীন এসআই আশিকও ছিল। কিন্তু তারা পালিয়ে যান। সে সময় এসআই আশিকের আপন ভাই এসআই আনিসও কক্সবাজার ডিবিতে কর্মরত ছিল। এসআই বেলাল ও এসআই আশিক পলাতক। আর গ্রেফতারকৃত মাহফুজ কারাগারে। এদিকে ৭ লাখ ইয়াবা নিয়ে এএসআই মাহফুজ গ্রেফতার হবার পর তোলপাড়ের মুখে কক্সবাজারে ডিবি পুলিশের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। বর্তমান পুলিশ সুপার হিসেবে ড. একেএম ইকবাল হোসেন কক্সবাজারে যোগদানের পরেই ডিবি পুলিশকে আবারও সক্রিয় করে তোলেন। ডিবি পুলিশ সক্রিয় হওয়ার পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। পাহাড়সম অভিযোগ মাথায় নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। এর আগেও পিকআপ ভর্তি ইয়াবাসহ গাড়ি উধাও হয়ে গিয়েছিলো মর্মে এক এসআই এর বিরুদ্ধে পত্রপত্রিকায় খুব জোরেসোরে লেখালেখি হয়েছিলো। কিছুদিন পর তাকে বদলি করে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, তদারকির অভাবে ডিবি পুলিশ সদস্যরা বারবার বেপরোয়া হচ্ছেন। এবারকার অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা যার প্রমাণ। কেননা, নিয়ম অনুসারে কোন এসআই ও এএসআই এর নেতৃত্বে অপারেশনে যাবার আগে অবশ্যই দায়িত্বরত ইনচার্জকে অবহিত করে যেতে হবে। নেতৃত্বে থাকার নিয়ম ওই টিমের টিম লিডার ইন্সপেক্টর ইয়াসির আরাফাত। বর্তমানে ওসি ডিবির কার্যক্রমকে পরিচালনা করার জন্য ৩ জন ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে ৩টি টিমে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। ১৭ লাখ টাকাসহ মুক্তিপণের যে ঘটনাটি ঘটলো সে টিমের টিম লিডার ইন্সপেক্টর ইয়াসির আরাফাত। তাহলে ইয়াসির এর দায় এড়াতে পারেন কিনা সে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল। এসআই আবুল কালাম আযাদ, এসআই মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ৭ সদস্যদের ডিবি পুলিশ টেকনাফে গেলো? এটা তার অগোচরে হবার কথা নয়। জেলার শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলেন, ডিবি পুলিশের মূল হোতা যারা তারাতো এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে তদন্ত করে এসব বড় বড় রাঘববোয়ালদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন। এ ব্যাপারে ডিবির ইনচার্জ মনিরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে কিছু না জানিয়ে অভিযুক্ত ৭জন টেকনাফে গিয়েছিলো, তাদের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আমাদের মানসম্মান পর্যন্ত ভুলুণ্ঠিত করেছে। ২নং টিমের টিম লিডার ইন্সপেক্টর ইয়াসির আরাফাতের বক্তব্য নেয়ার জন্য মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তার টিমের ৭ জনই অপহরণ ঘটনার দায়ে কারাগারে রয়েছেন।
কক্সবাজারের সচেতন মহল মনে করেন, তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদারও ডিবি পুলিশ সদস্যদের মধ্যে জড়িত আসল ইয়াবা ডনদেরকে এমন শাস্তি দিতে হবে যেন তারা ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে না পড়ে। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র অনেক নেতারা মনে করেন, ইয়াবার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও দলের নেতাকর্মীরা খুবই কঠোর। আমাদের নেত্রী জেহাদ ঘোষণা করেছেন। সুতরাং আমাদের নেত্রীর সাথে একমত হয়ে এই দেশ ইয়াবামুক্ত বাংলাদেশে পরিণত হোক আমরা চাই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদার ও জড়িত পুলিশ সদস্যদের থলের বেড়াল বেড়িয়ে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না সেটাই এখন মূল প্রশ্ন। ডিবি সক্রিয় হবার পর থেকে এমন কোন দিন রাত নেয় দু’তিনটি মাইক্রোভর্তি ডিবি পুলিশের গাড়ি টেকনাফ থেকে আসা-যাওয়া করেনা। তারা কি জাতির কাছে স্পষ্ট করবেন কতজন লোককে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। কিছু গ্রেফতার, জব্দ, ছাড়া কিছুই তারা করতে পারে নি। কারণ তারা নিজেরাই নিজেদের আখের গোছানোর জন্য ব্যস্ত। রক্ষক হয়ে যদি ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ থাকে। তাহলে নিয়ম অনুসারে যা হবার তাই হয়।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ও তদন্ত কমিটির প্রধান আফরাজুল হক টুটুলের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
৩নং টিমের টিম লিডার ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, সম্প্রতি ৩৬ হাজার ইয়াবা ও ২টি এলজিসহ একজনকে ফিশারী ঘাট থেকে গ্রেফতার করি। তথাকথিত সাংবাদিক নামধারী ৩জনকে ইনানী থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করি। ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়ার সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, আমি ডিবিতে যোগদান করেছি প্রায় ৪ মাস। তার মধ্যে আমার নেতৃত্বে প্রায় ২ লাখেরও অধিক ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করি ও ২০-২৫কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। আমি দায়িত্বশীলতার সহিত চেষ্টা করেছি আমার দায়িত্বকে সফলভাবে পালন করার জন্য।
১নং টিমের টিম লিডার ইন্সপেক্টর সুখেন্দ্র চন্দ্র সাহার সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, আমি যোগদান করেছি প্রায় ৪ মাস। এর মধ্যে নিয়মিত মামলা রুজু করেছি ৩১টি, ৬৬ হাজার ৩শ বিশ পিস ইয়াবা জব্দ, ৪৫ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার, ১টি ১ নলা বন্দুক, ২ রাউন্ড গুলিসহ ১জন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছি।
এদিকে কালের কণ্ঠে সূত্রে জানলাম, গ্রেপ্তার বাণিজ্যের অত্যাচার : টেকনাফ-উখিয়া সীমান্তবাসীর কাছে ডিবি মানেই এক মহাআতঙ্ক। কক্সবাজার জেলা ডিবি পুলিশ সদস্যরা এর আগেও দফায় দফায় ইয়াবা উদ্ধার এবং ইয়াবা কারবারিদের আটকের নামে বাণিজ্য করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকারও হয়েছেন। গত চার মাসের মধ্যে টেকনাফ সীমান্তে এ রকম কমপক্ষে তিনটি ঘটনা ঘটেছে।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান (২৭) থাকেন সৌদি আরবের মদিনায়।
গতকাল সন্ধ্যায় মাহমুদুল হাসান বলেন, গত ২০ অক্টোবর সকালে কক্সবাজার শহরের বিমান অফিসে টিকিট কনফার্ম করার জন্য গেলে লিংক রোডে ডিবির পরিদর্শক ইয়াছির আরাফাতের দলের সদস্যরা তাঁকে তুলে নেন মাইক্রোতে। ডিবির উপপরিদর্শক মনির, আলাউদ্দিন ও আরাফাত গাড়িতে তুলে তাঁকে বেদম মারধর করেন। তাঁকে বড় ইয়াবা কারবারি আখ্যা দিয়ে ৫০ লাখ টাকা এবং তাঁর সঙ্গীকেও ৫০ লাখ টাকা দিতে বলেন। অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে ইয়াবার মামলা দিয়ে চালান দেওয়া হবে বলে ভয় দেখানো হয়।
‘আমি ডিবি সদস্যদের আমার ভিসা, পাসপোর্ট এবং বিমানের টিকিট দেখানোর পরও নিস্তার পাইনি। তাঁদের হোটেল ওশান প্যারাডাইজসংলগ্ন একটি দেয়ালঘেরা মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রবাসী গাড়িতে তাঁদের ইয়াবা, জাল টাকা, বন্দুক ও দা-কিরিচ দেখিয়ে বলা হয়, এসব দিয়েই মামলায় চালান করা হবে। পুরো দিন গাড়িতে রাখার পর শেষ পর্যন্ত তাঁদের বাধ্য করা হয় ১২ লাখ টাকা দিতে। প্রবাসী মাহমুদুল বলেন, ‘আমার স্ত্রীর গহনা বিক্রি ও ধারদেনা করে এ টাকা ডিবিকে দিতে বাধ্য হয়েছি। ’জানতে চাইলে ডিবি পরিদর্শক ইয়াছির আরাফাত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
দ্বিতীয় পর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদার ও পুলিশ সদস্যদের ইয়াবা বাণিজ্য ও গ্রেফতারের প্রতিবেদনের প্রাসঙ্গিক সমাচার।
লেখক পরিচিতি : মো: আকতার হোছাইন কুতুবী সহ-সম্পাদক জাতীয় দৈনিক আমার কাগজ, দি গুড মর্নিং, প্রধান সম্পাদক জাতীয় ম্যাগাজিন জনতার কণ্ঠ ও উপদেষ্টা সম্পাদক জাতির আলো, ঢাকা। মোবাইল : ০১৮২২৮৫৮৪০০, ০১৭১২১৮০২৬৩। ই-মেইল : akterkutubinews@gmail.com

(মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব-সিবিএন)